কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহু বছর আগে একটি পঙ্কতি লিখে গেছেন, ‘‘এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলে না, শুধু সুখ চলে যায়।’’ প্রেম ও সুখ খুঁজে পাওয়ার এই যন্ত্রণা যুগ যুগ ধরে প্রেমিক-প্রেমিকাদের জীবনে দেখা দিয়েছে। কেউ ভালোবাসার প্রতিটি মুহূর্তে সুখের আশায় জীবনের পথে চলে, কিন্তু কখনোই একসঙ্গে সুখের অভিজ্ঞতা পাওয়া যায় না। জীবনের কোনো না কোনো সময়ে, একসময় যার সঙ্গে প্রেম ছিল, তার সঙ্গ থেকে বিচ্ছেদ ঘটেই থাকে। তখন প্রশ্ন আসে, ‘‘কেন এই সম্পর্কের বিচ্ছেদ?’’ ‘‘কেন সম্পর্কের পথ দুই দিকে বাঁকা হয়ে যায়?’’
এ ধরনের সম্পর্কের দিকে গভীর দৃষ্টিপাত করলে, দেখা যায় যে দীর্ঘদিনের সম্পর্কেও একসময় একে অপরের মাঝে অমিল তৈরি হয়। এমনই একটি প্রশ্ন গত দিনগুলিতে উঠেছিল বলিউডের পরিচালক করণ জোহরের কাছে। তিনি বিখ্যাত অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফকে প্রশ্ন করেন, সাবেক সম্পর্ক থেকে কী শিক্ষা পেয়েছেন তিনি। ক্যাটরিনার উত্তর ছিল, ‘‘আমি বুঝেছি যে, নির্ভরশীলতাই প্রেমের ঘুণপোকা। যখন আপনি অন্যের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল হয়ে যান, তখন সম্পর্কের মাঝে ভারসাম্যহীনতা আসতে শুরু করে।’’
ক্যাটরিনা আরও বলেন, ‘‘যখন আপনি অন্যের ওপর নিজের সুখের দায়িত্ব চাপিয়ে দেন, তখন সেই চাপ কোনো না কোনো সময়ে অতিরিক্ত হয়ে যায়। আর একদিন সেই চাপ ভারী হয়ে পড়লে, সম্পর্ক নষ্ট হতে শুরু করে।’’ তিনি বলেন, ‘‘এমন পরিস্থিতিতে আপনি অভিযোগ করতে পারেন, ‘তুমি আমাকে খুশি করতে পারছো না’, ‘আমার সুখের পরোয়া তোমার নেই’, এবং তখন সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়।’’
ক্যাটরিনা তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘‘আমার মতে, সবচেয়ে সুন্দর সম্পর্ক তখনই হয়, যখন দুজনের মধ্যে নির্ভরশীলতা না থাকে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নির্ভরশীলতার বদলে সম্পর্কের মধ্যে মুগ্ধতা, সম্মান এবং সাহচর্য থাকতে হবে।’’ ক্যাটরিনার মতে, যখন এই তিনটি উপাদান সম্পর্কের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়, তখন সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
সম্পর্কে যদি সুখী থাকতে চান, তবে নিজের সুখের দায় অন্যের ওপর না চাপিয়ে, একে অপরকে সম্মান দিয়ে, সাহচর্য বজায় রাখতে হবে। সম্পর্কের মধ্যে মুগ্ধতা ও সম্মান থাকলে, তা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে ওঠে। তাই, ক্যাটরিনা কাইফের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা যা শিখতে পারি তা হলো, কোনো সম্পর্কেই নির্ভরশীলতা থাকলে তা ধীরে ধীরে সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
তথ্য সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ