আইফোন তৈরিতে খরচ হয় মাত্র ১২ হাজার টাকা!

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে চীন এবার এক নতুন ও কার্যকর কৌশল নিয়েছে। তারা মার্কিন বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলোর প্রকৃত উৎপাদন খরচ ফাঁস করে দিয়ে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

চীনের জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টিকটকে সম্প্রতি এমন কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, গুচি, ডিওর এবং লুই ভিয়েত্তোর মতো নামকরা বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের উৎপাদন খরচ আশ্চর্যজনকভাবে কম।

উদাহরণস্বরূপ—

  • গুচির একটি হ্যান্ডব্যাগ তৈরি করতে খরচ হচ্ছে মাত্র ২১ হাজার টাকা, অথচ বাজারমূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা।
  • ডিওরের ব্যাগ তৈরি হচ্ছে মাত্র ৫ হাজার টাকায়, যার বাজারমূল্য প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
  • একটি আইফোন তৈরি করতে খরচ হচ্ছে মাত্র ১২ হাজার টাকা, যা বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়।

এই তথ্য প্রকাশে সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, শুধুমাত্র একটি ব্র্যান্ড নামের জন্য পণ্যের এত বেশি মূল্য গ্রহণ কতটা যৌক্তিক?

তথ্য ফাঁস করার মধ্যেই থেমে থাকেনি চীন। বরং একই প্রযুক্তি, উপকরণ এবং ডিজাইন ব্যবহার করে তারা নিজস্ব অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ব্র্যান্ডবিহীন পণ্য বাজারজাত করতে শুরু করেছে। এই পণ্যগুলোর দাম মূল ব্র্যান্ডের তুলনায় প্রায় দশগুণ কম হলেও, চীনা নির্মাতাদের দাবি— মানের দিক থেকে এগুলো কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই।

বিশ্লেষকদের মতে, চীনের এই পদক্ষেপ শুধু মার্কিন বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রিকে প্রভাবিত করবে না, বরং তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু ও ক্রেতাদের আস্থাও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

ভোক্তাদের মধ্যে নতুন করে ভাবনা শুরু হয়েছে—

  • একটি নামের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় কতটা যৌক্তিক?
  • ব্র্যান্ড মানে কি শুধু প্রতীক, নাকি বাস্তবিক গুণগত মান?

এই প্রশ্নগুলো এখন ক্রমেই বেশি মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে।

চীন সরাসরি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যে বিভিন্ন শুল্ক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চলেছে, এই তথ্য ফাঁস তারই কৌশলী জবাব। এর ফলে শুধু মার্কিন অর্থনীতিই নয়, বরং বিশ্ববাজারে মার্কিন ব্র্যান্ডের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা প্রবল।

এই ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ভোক্তা এখন চীনের এই নতুন উদ্যোগের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। দাম, মান ও ব্র্যান্ড এই তিনের ভারসাম্য নিয়েই নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন সকলে।

বিশ্বব্যাপী ভোক্তা মনস্তত্ত্বে এই ঘটনা একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত এবং তরুণ প্রজন্ম, যারা মানসম্মত কিন্তু সাশ্রয়ী বিকল্প খুঁজে থাকেন, তারা এখন ব্র্যান্ডবিহীন এই চীনা পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।

চীনের এই তথ্য ফাঁস বিশ্ব অর্থনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এটি শুধু একটি বাণিজ্য কৌশল নয়, বরং একটি বৈশ্বিক মনোভাব পরিবর্তনের সূচনা। দাম, মান এবং ব্র্যান্ড— এই তিনটির নতুন সংজ্ঞা রচনার দিকে হয়তো আমরা এগিয়ে চলেছি।

তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ

Leave a Reply