সুনামগঞ্জ সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার

সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত জেলা সুনামগঞ্জে। এই প্রেক্ষাপটে জেলার ভারতীয় সীমান্তজুড়ে টহল ও নজরদারি বাড়িয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জ জেলার ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারতীয় সীমান্তজুড়ে বিজিবি এখন সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এর মধ্যে ৮৮ কিলোমিটার স্থল ও ২ কিলোমিটার নদী সীমান্ত রয়েছে, যা সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবির আওতায় পরিচালিত হয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে কোনো অনুপ্রবেশ বা অপতৎপরতা প্রতিরোধে বিজিবি গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পাহাড় এলাকায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে শূন্য রেখা বরাবর এক কিলোমিটারের মধ্যে রাত্রীকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে। জানা গেছে, শনিবার রাত থেকে শুরু হওয়া এই কারফিউ বর্তমানে কার্যকর রয়েছে এবং এর মাধ্যমে সীমান্ত নিরাপত্তা আরো কঠোর করা হয়েছে।

সীমান্তবর্তী মধ্যনগর, তাহিরপুর ও নবীনগর এলাকার বাসিন্দারা জানান, বর্তমান সময়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের তৎপরতা অনেক বেড়ে গেছে। আগে যেখানে সাধারণ লাল হ্যালোজেন লাইট ব্যবহার করা হত, সেখানে এখন স্থাপন করা হয়েছে আধুনিক এলইডি লাইট, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা এবং সেন্সর প্রযুক্তি।

স্থানীয়রা আরও জানান, বিজিবি সীমান্তবাসীদের সতর্ক থাকতে বলেছে এবং যে কোনো সন্দেহজনক চলাচল বা কার্যক্রম সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানাতে নির্দেশনা দিয়েছে। সীমান্তে সার্বক্ষণিক নজরদারি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে বিজিবি প্রশাসনিক জনবল থেকে অপারেশনাল জনবল বাড়িয়ে দিনরাত টহল দিচ্ছে।

সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির বলেন, “বর্তমান প্রেক্ষাপটে নানা ঘটনা ঘিরে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত জনগণকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে আমরা সর্বদা প্রস্তুত।”

তিনি আরও জানান, সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে এবং নিরাপত্তা মূল্যায়নের অংশ হিসেবে গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তে অনুপ্রবেশ রোধে হুঁশিয়ারি জারি করা হয়েছে এবং প্রতিটি অঞ্চলকে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে।

সীমান্তবর্তী জনগণ বিজিবির এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করছেন, ভারতীয় অংশে তৎপরতা যেভাবে বাড়ছে, তাতে বাংলাদেশের দিক থেকেও একইভাবে সতর্ক থাকা উচিত। সীমান্তে সেন্সর ও ক্যামেরা ব্যবহারের ফলে যে কোনো ধরনের চলাচল সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা এখন শুধু ওই দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই; এর ছায়া পড়েছে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত অঞ্চলেও। বিশেষ করে সুনামগঞ্জ সীমান্তে বিজিবি যে সক্রিয় অবস্থানে রয়েছে, তা এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সীমান্তবাসীদের সহযোগিতায় বিজিবি এখন আগের চেয়েও বেশি প্রস্তুত এবং সজাগ।

তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ

Leave a Reply