৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করলো সরকার

গত জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। নতুন সরকারের আগমনে দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক, অর্থনীতি ও বাণিজ্যে নতুন গতি সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬.৭৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) BPM6 পদ্ধতিতে হিসাব করলে এই রিজার্ভের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ২১.৩৯ বিলিয়ন ডলারে, আর প্রকৃত ব্যয়যোগ্য নেট রিজার্ভ দাঁড়ায় প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলারে।

এই রিজার্ভ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করছেন রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স প্রবাহকে। এপ্রিল মাসের প্রথম ১২ দিনেই দেশে এসেছে ১০৫.২৪ মিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয়। এর আগে, মার্চ মাসে প্রবাসী আয় দাঁড়ায় ৩.২৯ বিলিয়ন ডলারে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরু থেকে টানা সাত মাস ধরে রেমিটেন্স ২ বিলিয়ন ডলারের ওপরে অবস্থান করছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংক-ভিত্তিক প্রণোদনা ও বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠানোর উদ্যোগ এই সাফল্যের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন দেশের বৈদেশিক ঋণ ছিল প্রায় ৩.২ বিলিয়ন ডলার (৩৯ হাজার কোটি টাকা)। তবে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গৃহীত যুগোপযোগী নীতি ও কঠোর পরিকল্পনার মাধ্যমে এই ঋণ মাত্র আট মাসে কমে এসেছে ৮২৯ মিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ ২৯,০০০ কোটি টাকারও বেশি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে এই সময়ের মধ্যে।

সরকার জ্বালানি খাতে ৬,৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে, যার ফলে এলএনজি ইউনিট প্রতি মূল্য ৭০ টাকা থেকে কমিয়ে ৩০ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হলেও, দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি খাতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

এছাড়া, গ্যাস খাতের বকেয়া ঋণও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত এই খাতের বকেয়া ছিল ৭৫ কোটি টাকা, যা বর্তমানে কমে ২৪ কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে।

রেমিটেন্সের অব্যাহত প্রবাহ, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে অগ্রগতি এবং জ্বালানি খাতে সংস্কার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সাহসী ও বাস্তবভিত্তিক নীতিগত সিদ্ধান্তগুলোই এই পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি।

বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী যে, এই সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড়াবে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হবে।

তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ

Leave a Reply