শুল্ক হুমকির মুখে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার কমাচ্ছে

বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধের উত্তাপে যখন অর্থনীতি নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে, তখন ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ইসিবি সুদের হার এক চতুর্থাংশ হ্রাস করেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ইউরোজোনে এখন সুদের হার ২.২৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত এক বছরে সপ্তমবারের মতো হার কমানোর পদক্ষেপ।

এই বাণিজ্য উত্তেজনার সূচনা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত থেকে হয়েছে। তার এই পদক্ষেপ বৈশ্বিক বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে, যা শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলছে।

ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ইউরোজোনের ২০টি দেশের অর্থনীতি আপাতভাবে কিছুটা সহনশীল হলেও, সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা এখন অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অচলাবস্থা, আর্থিক বাজারের চাপ ও ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ব্যবসায়িক বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে।

ইসিবির প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “যখন সাধারণ মানুষ ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগে, তখন তারা স্বাভাবিকভাবেই খরচ কমিয়ে দেয়।” অর্থাৎ ভোক্তা আস্থার অভাবই এখন বৃহৎ অর্থনীতির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শুধু ইউরোপ নয়, বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোরও একই ধরণের মতামত প্রকাশ পেয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ার জেরোম পাওয়েল সবাই এই বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তাদের মতে, এই বাণিজ্যিক উত্তেজনা বড় কোম্পানি থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রা পর্যন্ত ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

অন্যদিকে, ইউরোপ যখন হার কমাচ্ছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ মার্চ মাসের বৈঠকে সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছে। চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল জানান, বাণিজ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সুদের হারে পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুবই কম।

শিকাগোতে এক বক্তৃতায় পাওয়েল বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তগুলো অর্থনৈতিক নীতিতে একেবারে মৌলিক পরিবর্তন এনেছে।” তিনি সতর্ক করেন, শুল্ক নীতির কারণে মার্কিন অর্থনীতিতেও চাপ তৈরি হচ্ছে।

তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট নন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “জেরোম পাওয়েল সব কিছুতেই দেরি করেন এবং ভুল করেন। তার সর্বশেষ রিপোর্ট ছিল সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলা। তাকে যত দ্রুত সম্ভব বরখাস্ত করা উচিত!”

এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ইসিবি প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমার সম্মানিত সহকর্মী এবং বন্ধু জে পাওয়েলের প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা রয়েছে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বাধীনতা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং সরকার থেকে তাদের কার্যক্রম পৃথক রাখা উচিত।”

বিশ্ব অর্থনীতি এখন এক জটিল সময় পার করছে। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উত্তেজনার প্রভাব প্রশমনে একটি সাহসী পদক্ষেপ, অন্যদিকে এটি বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ভূমিকা এবং স্বাধীনতার গুরুত্বও তুলে ধরছে। সামনে কী ঘটবে, তা নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি এবং বাণিজ্য নীতির ওপর।

তথ্যসূত্র: CNN

Leave a Reply