ভারতশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগাম জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে এক ভয়াবহ বন্দুক হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৬ জন পর্যটক। নিহতদের প্রায় সবাই পুরুষ পর্যটক। এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামে একটি সংগঠন, যাদের পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়। এই হামলাকে ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাণঘাতী হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
কাশ্মীরের এই মর্মান্তিক হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কড়া বার্তা দিয়েছেন। তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তোলেন এবং বলেন, ভারতের পক্ষ থেকে ‘শক্ত ও স্পষ্ট জবাব’ দেওয়া হবে।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহও এই হামলার বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জানিয়েছেন, ভারতের জবাব হবে দৃঢ় ও সুস্পষ্ট। ভারতের দাবি, হামলায় জড়িত ‘রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’-এর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠনের যোগসূত্র রয়েছে।
অন্যদিকে পাকিস্তান এই হামলায় নিজেদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, এই হামলা আসলে ভারতের ‘পরিকল্পিত একটি ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’। তার ভাষায়, “আমরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে সন্দেহ করি, এটি একটি ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’—অর্থাৎ নিজেরাই ঘটিয়ে অন্যের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা।”
তিনি আরও বলেন, “ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সক্রিয় কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো ধরনের সংযোগ নেই। কাশ্মীরে যা ঘটছে বা কাশ্মীরি কোনো আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই। আমরা কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত নই।”
খাজা আসিফ ভারত সরকারের সব অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, “ভারত সরকার যে অভিযোগ করছে, আমি তা জোরালোভাবে নাকচ করছি।” তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এই দাবির পক্ষে কোনো ধরনের প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।
পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার দেশের একটি বেসরকারি চ্যানেলে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, “ভারতের নেওয়া পদক্ষেপগুলো শিশুসুলভ এবং এতে গুরুত্বের অভাব রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “ভারত প্রতিটি ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং অতীতের মতো এবারও পাকিস্তানকে দোষারোপ করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা বৈঠকে ভারতকে যোগ্য জবাব দেব, এই জবাব কম হবে না।”
এই হামলার পর থেকে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। চলছে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কও ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে।
কাশ্মীরে রক্তক্ষয়ী হামলার ঘটনা শুধু একটি অঞ্চল নয়, গোটা উপমহাদেশের স্থিতিশীলতার জন্যই নতুন করে হুমকি তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তথ্যসূত্র: সমকাল