১৯৯২ সালে মুক্তি পাওয়া হলিউডের জনপ্রিয় সিনেমা ‘হোম অ্যালন ২ : লস্ট ইন নিউ ইয়র্ক’ আবারও আলোচনায় এসেছে। ক্রিস কলম্বাস পরিচালিত এই সিনেমাটি সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একটি কাল্ট ক্লাসিক হিসেবে বিবেচিত। তবে সম্প্রতি পরিচালক এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তিনি চান সিনেমা থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দৃশ্যটি মুছে ফেলা হোক।
সিনেমার একটি ক্যামিও দৃশ্যে দেখা যায়, শিশু চরিত্র কেভিন নিউ ইয়র্কের প্লাজা হোটেলে প্রবেশ করে এবং দিকনির্দেশনা চায় ট্রাম্পের কাছে। এই ছোট দৃশ্যটির দৈর্ঘ্য মাত্র সাত সেকেন্ড হলেও এটি পরিচালক কলম্বাসের জন্য বর্তমানে এক বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
পরিচালক ক্রিস কলম্বাস বলেন, “এই দৃশ্যটি এখন একটা অভিশাপ হয়ে গেছে। আমি চাই সেটা আর সিনেমায় না থাকুক।” তিনি আরও বলেন, “লোকজন মনে করছে, আমি যদি এখন ট্রাম্পের দৃশ্যটি সিনেমা থেকে বাদ দেই, হয়তো আমাকেই দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে।” তার মতে, বিষয়টি এখন এক জটিল অবস্থায় এসে ঠেকেছে।
এই দৃশ্যের পেছনে রয়েছে একটি চমকপ্রদ ঘটনা। সেই সময় প্লাজা হোটেলের মালিক ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরিচালক কলম্বাস জানান, “আমরা যখন হোটেলে শুটিংয়ের জন্য অনুমতি চাই, তখন ট্রাম্প শর্ত দেন যে তাকে সিনেমার একটি দৃশ্যে সুযোগ দিতে হবে।”
প্রথমদিকে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় ছিলেন পরিচালক। কিন্তু সিনেমার স্ক্রিনিংয়ের সময় দর্শকদের উচ্ছ্বাস দেখে তিনি দৃশ্যটি রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই ক্যামিও দৃশ্যটি পরে বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
তবে সময়ের পরিবর্তনে ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন, তখন দর্শকদের একাংশ এই দৃশ্য সরানোর দাবি জানান। এমনকি সিনেমার প্রধান অভিনেতা ম্যাকাওলে কালকিনও এই দাবির প্রতি সমর্থন জানান।
এক অনলাইন ক্যাম্পেইনে এক ভক্ত টুইট করেন, “ট্রাম্পের জায়গায় ৪০ বছর বয়সী কালকিনকে বসানো হোক।” এর উত্তরে কালকিন লিখেছিলেন, “Sold” – অর্থাৎ তিনি এই প্রস্তাবে রাজি।
২০২৩ সালে ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এই বিতর্কের জবাব দেন। তিনি লেখেন, “কলম্বাসই আমাকে সিনেমায় থাকার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। আমি প্রথমে না বলেছিলাম, কিন্তু পরে তারা আমাকে অনুরোধ করে দৃশ্যটিতে অভিনয় করতে। সেই ক্যামিও দৃশ্য সিনেমার সফলতায় অনেক সাহায্য করেছে।”
ট্রাম্প আরো বলেন, “এখন ৩০ বছর পর কলম্বাস বলছে আমি সিনেমায় ঢুকতে জোর করেছি! এটা একেবারেই মিথ্যা।” তার দাবি, এই দৃশ্যটি ছিল দর্শকদের জন্য একটি বাড়তি আকর্ষণ এবং এটি সিনেমার জনপ্রিয়তায় ভূমিকা রেখেছে।
তিন দশক আগের একটি মাত্র ক্যামিও দৃশ্য আজ সিনেমার পরিচালক এবং এক সময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যে মতবিরোধের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময়ের বিবর্তনে, এক সময়ের হাস্যরসের উপাদান এখন হয়ে উঠেছে বিতর্কের বিষয়।
তথ্য সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ