হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো জানা খুব জরুরি

গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহে ঘাম হওয়া ও শরীরের একটু খারাপ লাগা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু কখন যে এই অনুভূতি হিট স্ট্রোকে পরিণত হয়, তা বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো জানা অত্যন্ত জরুরি, যেন সময় থাকতেই নিজেকে ও অন্যকে রক্ষা করা যায়।

হিট স্ট্রোক কেন হয়?

শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বা হোমিওস্ট্যাসিস ব্যর্থ হলে হিট স্ট্রোক হয়। তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যেসব পরিস্থিতিতে ব্যর্থ হয় তার মধ্যে প্রধান হলো অত্যধিক গরম ও আর্দ্র পরিবেশে দীর্ঘক্ষণ থাকা অথবা শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা ঘাম বা অন্য কোন প্রক্রিয়ায় বের হতে না পারা। একে বলা হয় ক্ল্যাসিকাল হিট স্ট্রোক। আবার যারা রোদের তাপে বাইরে কাজ করেন বা মাথায় রোদ নিয়ে দীর্ঘ সময় যাত্রা করেন, তাদেরও এই সময়ে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। একে এক্সারশনাল হিট স্ট্রোক বলা হয়।

হিট স্ট্রোকের কারণ

হিট স্ট্রোক হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

১. শরীরের পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন): পর্যাপ্ত পানি না পান করলে ঘাম কম তৈরি হয়, ফলে শরীরের তাপ বের হতে বাধা পায়।

২. দীর্ঘক্ষণ কঠোর শারীরিক পরিশ্রম: গরমে অতিরিক্ত ব্যায়াম ও কায়িক শ্রম করলে অথবা সেনাবাহিনীর ট্রেনিংয়ের সময় হিট স্ট্রোক ঘটতে পারে।

৩. বয়স ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা: শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা স্থূলতাযুক্ত ব্যক্তিদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি।

৪. কিছু ওষুধ: কিছু ওষুধ শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, তাই অতিরিক্ত গরমে কাজ করার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৫. গরম পোশাক বা বদ্ধ পরিবেশ: অতিরিক্ত মোটা কাপড় পরা বা বদ্ধ স্থানে তাপ জমে হিট স্ট্রোক হতে পারে।

হিট স্ট্রোকের লক্ষণ

হিট স্ট্রোকের লক্ষণ দ্রুত চিহ্নিত করা গুরুত্বপূর্ণ। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

১. উচ্চ তাপমাত্রা: থার্মোমিটার দিয়ে মাপলে ১০৪ ফারেনহাইট অথবা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা। ত্বক গরম, শুষ্ক ও লাল হয়ে যাওয়া।

২. মাথা ঘোরা বা ভারসাম্য হারানো।

৩. মাইগ্রেনের মতো তীব্র মাথাব্যথা।

৪. বিভ্রান্তি বা অসংলগ্ন কথা বলা, যেমন সময়-স্থান ভুলে যাওয়া।

৫. খিচুনি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

৬. হ্যালুসিনেশন বা প্রলাপ বকা, অদ্ভুত আচরণ করা।

৭. হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হওয়া।

৮. রক্তচাপ কমে যাওয়া (হাইপোটেনশন)।

৯. পেশীতে ব্যথা বা খিঁচুনি।

১০. বমি বা ডায়রিয়া, কখনও কখনও রক্তপাত সহ।

১১. শ্বাস দ্রুত ও অগভীর হয়ে যাওয়া।

১২. চোখে ঝাপসা দেখা বা পেশী দুর্বল লাগা।

হিট স্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসা

হিট স্ট্রোক গুরুতর হতে পারে, তাই লক্ষণগুলো দেখলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:

  • রোগীকে রোদ বা গরম পরিবেশ থেকে সরিয়ে ঠাণ্ডা, শীতল জায়গায় নিয়ে যান।
  • গলার টাই, চাপা জামা বা বেল্ট ঢিলা করে দিন।
  • রোগীর আশেপাশে ভিড় কমিয়ে দিন এবং বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন।
  • ভেজা টাওয়েল দিয়ে গলা, মাথা ও বগলে চেপে ধরুন।
  • সাময়িকভাবে এসব ব্যবস্থা নেওয়া পরও চিকিৎসকের কাছে দ্রুত পরামর্শ নেওয়া উচিত।

হিট স্ট্রোক প্রাথমিকভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হলেও, শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ব্যর্থতার কারণে এটি দ্রুত জীবনসংকট সৃষ্টি করতে পারে। তাই এর লক্ষণগুলো জানা এবং তৎক্ষণাৎ সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা খুবই জরুরি। নিজের এবং অন্যের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য এই তথ্যগুলো মনে রাখা উচিত।

তথ্যসূত্র: জাগো নিউজ

Leave a Reply