দাঁতের যত্ন ও মুখের হাইজিন রক্ষার পরামর্শ

সুন্দর ও সুস্থ হাসি শুধু আত্মবিশ্বাসই বাড়ায় না, এটি মুখগহ্বরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার দিকেও গুরুত্ব দেয়। ভালো ওরাল কেয়ার না হলে দাঁতের ক্ষয়, মাড়ির রোগ ও অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই দৈনন্দিন জীবনে কিছু নিয়ম মেনে চলাই হতে পারে সুস্থ দাঁতের চাবিকাঠি। ডা. শ্রুতি বলেন, “সুস্থ হাসি ধরে রাখতে ভালো ওরাল কেয়ারের গুরুত্ব অপরিসীম। দাঁত ও মাড়ির ক্ষয় রোধে প্লাক, জীবাণু ও খাদ্যকণাগুলো দূর করা জরুরি। এজন্য দিনে দুইবার—সকালবেলা ও রাতে ঘুমানোর আগে—দাঁত ব্রাশ করা দারুণভাবে সহায়ক।”

১. ২ মিনিট সময় নিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন

দাঁতের যত্নে সঠিকভাবে ব্রাশ করা শেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবার ব্রাশ করার সময় কমপক্ষে ২ মিনিট সময় নিন এবং দাঁতের প্রতিটি কোণা ও মাড়ির রেখা ধীরে ধীরে গোলাকারভাবে পরিষ্কার করুন। এটি দাঁতের প্লাক দূর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

২. প্রতিদিন ফ্লস ব্যবহার করুন

প্রতিদিন ফ্লস ব্যবহার করলে দাঁতের মাঝখানে আটকে থাকা খাদ্যকণা ও ব্যাকটেরিয়া সহজেই দূর হয়। এই কণাগুলো সাধারণ ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করা যায় না। নিয়মিত ফ্লস ব্যবহারে ক্যাভিটি ও মাড়ির রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

৩. ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করুন

ফ্লুরাইড দাঁতের এনামেলকে সুরক্ষা দেয় এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। তাই টুথপেস্ট কেনার সময় লেবেলে থাকা উপাদান তালিকায় ফ্লুরাইডের উপস্থিতি নিশ্চিত করুন। এটি দাঁতের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক।

৪. নিয়মিত টুথব্রাশ পরিবর্তন করুন

প্রতি ৩ থেকে ৪ মাস পর, কিংবা ব্রাশের ব্রিসল নরম বা ঝাপসা হয়ে গেলে নতুন টুথব্রাশ ব্যবহার করা উচিত। পুরনো ব্রাশ দাঁত ঠিকভাবে পরিষ্কার করতে পারে না, বরং মুখগহ্বরে জীবাণু ছড়িয়ে দিতে পারে।

৫. চিনি ও অ্যাসিডযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন

চিনি ও অ্যাসিডিক খাবার দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে এবং মুখে থাকা ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য হিসেবে কাজ করে। এই ধরনের খাবার খাওয়ার পরে ভালোভাবে কুলি করুন কিংবা দাঁত ব্রাশ করুন। একই সঙ্গে নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ করান।

৬. নিয়মিত দাঁতের ডাক্তার দেখান

প্রতি ছয় মাসে একজন ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া উচিত। এতে দাঁতে জমে থাকা টার্টার দূর করা যায় এবং দাঁতের যে কোনো সমস্যা আগেভাগেই ধরা পড়ে, যা চিকিৎসা সহজ করে তোলে।

৭. হাইড্রেটেড থাকুন

পর্যাপ্ত পানি পান করলে মুখের ভেতর আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং লালার সৃষ্টি হয়। লালা খাদ্যকণা ধুয়ে ফেলে এবং মুখের স্বাভাবিক পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে, যা মুখের দুর্গন্ধও কমায়।

৮. মাউথওয়াশ ব্যবহারে সচেতন হন

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বা ফ্লুরাইডযুক্ত মাউথওয়াশ দাঁতের অতিরিক্ত সুরক্ষা দিতে পারে। তবে এটি কখনোই ব্রাশ ও ফ্লসের বিকল্প নয়। এটি একটি সম্পূরক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।

৯. তামাকজাত দ্রব্য পরিহার করুন

তামাক দাঁত কালো করে ফেলে, মাড়ির ক্ষতি করে এবং মুখগহ্বরের ক্যানসার ও গাম ডিজিজের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই মুখগহ্বরের সুস্থতার জন্য তামাকজাত দ্রব্য থেকে সর্বদা দূরে থাকা উচিত।

সুস্থ দাঁত ও মাড়ির জন্য প্রতিদিন কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নিয়মিত ব্রাশ, ফ্লস, পর্যাপ্ত পানি পান এবং দাঁতের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার মাধ্যমে আপনি সহজেই মুখের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারেন। স্বাস্থ্যকর হাসির জন্য আজ থেকেই ওরাল কেয়ারে গুরুত্ব দিন।

তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ

Leave a Reply