গতকাল থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ঘিরে নানা রকম বিভ্রান্তিকর বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের গণহত্যা, ক্ষমা প্রার্থনা এবং ক্ষতিপূরণ ইস্যুতে দুই দেশের প্রকাশিত বার্তায় দেখা যাচ্ছে লক্ষণীয় ভিন্নতা। এ নিয়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪-এর এক আলোচনায় প্রশ্ন উঠে আসে— কেন এই দ্বৈত বার্তা?
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রাহীদ এজাজ স্পষ্ট করেন, “এটা কোনো দ্বৈত তথ্য নয়। বিষয়টি এমন যে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান আলাদা আলাদা প্রেস রিলিজ দিয়েছে।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, বাংলাদেশ প্রথমে একটি ব্রিফিং করে এবং পরে একটি প্রেস রিলিজ প্রকাশ করে। অপরদিকে, পাকিস্তান তাদের নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকের পর এককভাবে একটি প্রেস রিলিজ দেয়। পাকিস্তানের প্রেস রিলিজে ৭১-এর গণহত্যা, ক্ষতিপূরণ বা আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ই উল্লেখ করা হয়নি।
রাহীদ এজাজ আরও বলেন, এই ভিন্ন বার্তার উৎস হলো আলাদা আলাদা প্রেস রিলিজ। তিনি বলেন, “এটি দ্বৈত তথ্য নয় বরং আলাদা আলাদা প্রেস রিলিজের কারণে এমনটি হচ্ছে।”
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার রিপোর্টেও এই ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। যেমন, বিবিসি-র রিপোর্টে এই দাবিগুলোর উল্লেখ না থাকলেও, এপি নিউজ স্পষ্টভাবে জানায় যে বাংলাদেশ এসব বিষয় বৈঠকে তুলেছে। বাংলাদেশি গণমাধ্যমেও ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের দায় স্বীকার ও ক্ষমা চাওয়ার দাবির কথা বারবার এসেছে।
রাহীদ এজাজ স্মরণ করিয়ে দেন, এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। তিনি বলেন, ২০১০ সালের ১ নভেম্বর ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পরেও উভয় দেশ আলাদা আলাদা প্রেস রিলিজ দিয়েছিল।
সেই সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রকাশিত রিলিজে ৭১-এর গণহত্যা, সম্পদের হিসাব এবং আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসনের বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু পাকিস্তানের প্রেস রিলিজে এসবের কিছুই ছিল না।
রাহীদ আরও বলেন, “এ ধরনের বৈঠকে যৌথ বিবৃতি বা সম্মেলন না হওয়াটা বিরল কিছু নয়।” উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, চার মাস আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরের সময়ও কোনো যৌথ সংবাদ সম্মেলন বা স্টেটমেন্ট হয়নি।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বৈঠক ঘিরে যে বিভ্রান্তিকর বার্তা প্রচারিত হচ্ছে, তা মূলত দুই দেশের ভিন্ন ভিন্ন প্রেস রিলিজ থেকেই উদ্ভূত। রাহীদ এজাজের বক্তব্যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে, এটি কোনো গোপন বা দ্বৈত তথ্য নয় বরং কূটনৈতিক নিয়ম-নীতি মেনেই উভয় দেশ তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বার্তা প্রকাশ করেছে।
তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ